কুরআন মাজীদের সাত কেরাতের হেফাজত
আমার উম্মত এক কেরাতে (কুরআন) পড়তে সক্ষম হবে না। আল্লাহ তা‘আলা রাসুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে সহজ করে سبعة احرف (সাত কেরাত) এর সাথে তিলাওয়তের অনুমতি প্রদান করলেন। এ সম্পর্কিত বর্ণনা বুখারী শরীফে মুতাওয়াতির বা সুনির্ভরযোগ্য ক্রমধারাসূত্রে বর্ণিত আছে। যাতে রয়েছে-
ان هذا القران انزل على سبعة احرف فاقرؤوا ما تيسر منه
‘নিশ্চয় এ কুরআনকে সাত কেরাতে নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং যা সহজ হয় তা পাঠ কর।’
سبعة احرف কোন গোপন বিষয় নয়। সব যুগেই কেরাতে মুতাওয়াতিরাহ পড়া-পড়ানো ও কিতাবাদী রচনার মাধ্যমে এর প্রচার-প্রসারের ধারাবাহিকতা জারি ছিল। তৃতীয় শতাব্দী থেকে বর্তমান শতাব্দী পর্যন্ত এই শাস্ত্রের চর্চা মোটামুটি পর্যায়ে রয়েছে। এ সময়ের ভেতর প্রায় পাঁচ শতাধিক কিতাব রচনার সন্ধান পাওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত কেরাত বা পঠনপদ্ধতির কোনো একটিকে রহিত করার এখতিয়ার স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও নাই। সেখানে কোনো এক সাহাবী বা সকল সাহাবীর তো প্রশ্নই আসে না। বরং মুতাওয়াতির কেরাতসমূহের কোনো একটিকে অস্বীকার করা কুফুরী পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়।
একথা স্মর্তব্য যে, তাজবীদের সাথে কুরআন তিলাওয়াত ফরজে আইন। আর বিশুদ্ধ দশ কেরাতের ইলম ফরজে কেফায়া। ফরজে কেফায়ার অর্থ হলো, কোনো এলাকা বা স্থানে যদি কেউ কেরাতে আশারার কোনো এক কেরাতে পড়ে, তাহলে ঐ এলাকায় কমপক্ষে এমন একজন থাকা আবশ্যক যিনি ঐ কেরাতের জ্ঞান রাখেন।
একদিকে কেরাতে আশারার এই হুকুম; অন্যদিকে দ্বীনি মাদরাসাসমূহে এই শাস্ত্র চরমভাবে উপেক্ষিত। অধিকাংশ মাদরাসায় কেরাতের আলাদা কোনো জামাত নেই। নামেমাত্র থাকলেও সেখানে এক কেরাতের উপর পড়া-পড়ানো চলে। কেরাতে সাবআর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে ছাত্ররাও পড়তে আগ্রহী হয় না। এমনকি দাওরায়ে হাদীস পাশ করা অনেকেই কেরাতে সাবআর ইতিহাস, তাৎপর্য ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে বেখবর। এহেন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সাধারণ লোক তো বটেই এক সময় হয়ত মাদরাসার ছাত্ররা পর্যন্ত কেরাতে সাবআ বলতে কোনো কিছু বলতেই পারবে না। তবে কি ‘মুনাযযাল মিনাল্লাহ’ কেরাতগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে? আল্লাহ না করুন, এমন হওয়া তো মুসলমানদের জন্য চরম দুর্ভাগ্যের কারণ। ইলমে কেরাত ও তাজবীদের এই ভ্রæক্ষেপহীনতার সময়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও দ্বীনি ব্যাক্তিত্বদের দায়িত্ব যে, নিজেদের মাদরাসা ও পরিমÐলে ইলমে তাজবীদ বিশেষত সাবআ-আশারা শাস্ত্রে গুরুত্বারোপ করে পড়া-পড়ানোর ব্যবস্থা করা। এবং অন্যান্য বিষয় ও কিতাবাদির মতো কেরাতে সাবআর প্রতি মনোনিবেশ করা।
বাংলা উচ্চারণ দেখে তিলাওয়াত নাজায়েজ |
বাংলা উচ্চারণ দেখে তিলাওয়াত নাজায়েজ
বাংলা উচ্চারণ দেখে তিলাওয়াত সহীহ হয় না, নাজায়েজও বটে। মশকের মাধ্যমেই তিলাওয়াত শিখতে হবে। কেননা কুরআনুল কারীম বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। আরবী হরফগুলোর নিজস্ব মাখরাজ (উচ্চারণস্থল), সিফাত (শ্রীবর্ধণগুণবলী) ও প্রকাশভঙ্গি রয়েছে। যা অন্য ভাষার অক্ষর দিয়ে সম্ভব নয়। আরবী হরফকে বাংলা উচ্চারণ কিংবা অন্য কোনো ভাষার মাধ্যমে উচ্চারণ করলে অনেক ক্ষেত্রে চরম ভুল হওয়ার আশংকা আছে। এমনকি অর্থের মধ্যেও বিরাট পার্থক্য হয়ে যায়। তাছাড়া প্রতিটি ভাষার নিজস্ব প্রকাশভঙ্গি রয়েছে, যা অন্য ভাষার সাথে মিলে না। অধিকন্তু বাংলা উচ্চারণের মাধ্যমে কুরআন তিলাওয়াত করার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার কালামের প্রকৃতরূপকে বিকৃত করার শামিল। যা আল্লাহ তা‘আলা ও কুরআনে কারীমের সাথে চরম বেআদবীর নামান্তর। এজন্যই আরবী হরফের মাখরাজ ও সিফাতসহ কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ